আজকের গল্প-----* বাস্তব *
রচনা---------সমীর ✍️
আমাদের পাশের গ্রামেই , প্রিয়ব্রত দের বাড়ি-----আমি আর প্রিয়ব্রত ছোটবেলা থেকে একসাথে লেখাপড়া করেছি। আমার মাথা মোটা তাই , লেখাপড়া বেশি দূর করতে পারিনি। টেনেটুনে কোনরকমে উচ্চ মাধ্যমিকটা পার হয়েছিলাম।
প্রিয়ব্রতর মাথা সরু , তাই শুরু থেকেই লেখাপড়ায় ও খুব ভালো ছিল। মাধ্যমিকে তিনটে লেটারসহ স্টার পেয়েছিল।
ওদের বাড়ির অবস্থা খুব ভালো ছিল না। তাই মাধ্যমিকের পরেই। ওর বাবা প্রিয়ব্রতর পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। প্রিয়ব্রতর পড়াশোনা বন্ধ হয়েই যেত-----
যদি না সেই সময়ে কয়েকজন শিক্ষক মহাশয় ,ও পাড়ার কিছু সহৃদয় ব্যক্তি , সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে দিতেন।
এভাবেই প্রিয়ব্রত কোনরকমে , উচ্চমাধ্যমিকের লেখাপড়াটা চালিয়ে গিয়েছিল। এবং বলা বাহুল্য , উচ্চমাধ্যমিকে সে
খুব ভালো নাম্বার নিয়ে সে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিল।
কিন্তু এবার কলেজের পড়াশোনা , কিভাবে চালাবে সে----
তাই সে ঠিক করল। সকাল সন্ধ্যা টিউশনি পরিয়ে , সে তার কলেজের লেখাপড়ার খরচ চালাবে।
সেই মতো সে তার পড়াশোনার পাশাপাশি
সকাল সন্ধ্যায় , টিউশনি পড়াতে লাগলো।
এবং সে ইঞ্জিনিয়ারিং জয়েন এন্ট্রান্স দেয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগলো। এবং বলা বাহুল্য , জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ---
সে খুব ভাল রাঙ্ক করল। যেহেতু তার জয়েন্ট এর রেজাল্ট ভাল ছিল। তাই সে অতি সহজেই , যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে
পড়ার সুযোগ পেয়ে গেল। সে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে , পড়াশোনা করতে লাগলো।
এবার ও সে বরাবরের মত , যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো রেজাল্ট করে , সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পাস করল।
বর্তমানে সে কলকাতা সেক্টর ফাইভে , এক বড় আই টি কোম্পানিতে , একটি ভালো পোস্টে কর্মরত আছে।
বর্তমানে বেতন ও তার মোটামুটি ভালই।
কয়েক বছর হলো সে বিয়েও করেছে , বর্তমানে তার একটি দু বছরের ছেলেও আছে , বাবা-মা , স্ত্রী-পুত্র নিয়ে , মোটামুটি তার সুখের সংসার।
দু'বছর হলো , সে বিশাল বাড়িও করেছে।
আমি পড়াশোনা বন্ধ করে দিলেও , প্রিয়ব্রতর সাথে , আমার বন্ধুত্ব টা এখনো বন্ধ হয়ে যায়নি।
সেদিন বাজারে , প্রিয়ব্রতর সাথে আমার হঠাৎ দেখা হয়ে গেল।
তখন প্রায় রাত্রি নটা বাজে বাজে।
আমাকে দেখতে পেয়ে প্রিয়ব্রত প্রথমে বলে , কিরে কেমন আছিস বল ---?
আমি বললাম মোটামুটি ভালোই , তুই কেমন আছিস বল।
আমার কথার উত্তরে প্রিয়ব্রত বলে , আছি আর কি ,ওই চলে যাচ্ছে -----।
আমি তাকে বললাম , কথাটা প্রিয়ব্রত এমন করে বললি---
যেন তুই খুবই কষ্টে আছিস--?
প্রিয়ব্রত বলে আর বলিস না , সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত
অফিসে কাজের চাপ। তার উপরে সংসারে নানান ঝামেলা ,
বউয়ের এটা আনবে , সেটা আননি ? মায়ের কোমরের বাতের ওষুধ , বাবার শ্বাসকষ্টের ইনহেলার , ছেলের পেন্সিল--
আর ভালো লাগে না বুঝলি , মাঝে মাঝে কেমন যেন হাঁপিয়ে যাই।
এদিকে আবার অর্থনৈতিক মন্দা , তাই কোম্পানির অবস্থা খুব খারাপ। তাই কোম্পানি কর্মী সংকোচন করছে।
আগে যেখানে কুড়িজন কাজ করতো।
এখন সেখানে মাএ ৮ জন , তাই অফিসে কাজের চাপে রয়েছে খুব। আর ভালো লাগছে না বুঝলি -----
কথাগুলো একটানা বলার পর , প্রিয়ব্রত একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো , কিআর করবো আমার তো করার কিছু নেই -
যাদের করার কিছু ছিল তারা চলেগেছ ।
এই বলে প্রিয়ব্রত বলল আজ আসছিরে , অনেক রাত হয়ে গেলো। পরে আবার দেখা হবে , ভালো থাকিস।
আমি ও প্রিয়ব্রত কে বললাম আয় , ভালো থাকিস। প্রিয় ব্রত বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলো ----
আমি দেখলাম ওর পিঠে অফিস যাওয়ার ব্যাগ , আর দুই হাতে দুটি মস্তবড় ঢাউস পলিব্যাগে , সংসারের সব বাজার ভর্তি। সারাদিনে অফিসের কাজে ক্লান্ত , তার উপরেই মস্ত বড় বড় ঢাউস ব্যাগে মালপত্র হাতে নিয়ে , প্রিয়ব্রত একেবারে বেঁকে গিয়েছে ।
আমি দৌড়ে গিয়ে ওকে বললাম আমাকে একটা ব্যাগ দে একটু এগিয়ে দিয়ে আসি।
প্রিয়ব্রত বলল , আরে না না থাক , তোকে আর কষ্ট করতে হবে না , আমিই পারবো।
এরকম নিত্যদিন করতে করতে , এটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। আসছিরে পরে আবার দেখা হবে।
পাঠক এরকম অনেক প্রিয়ব্রত কে , আপনি আপনার বাড়ির পাশেই দেখতে পাবেন। এরকম অনেক প্রিয়ব্রত কে আপনারা হয়তো জানেন----
কিন্তু এটা কি জানেন ---? যে মানুষটা সংসারের সবাইকে
সুখী রাখার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে। যে মানুষটা সংসারের সবাইকে সুখী করার জন্য , অবিরাম নিরলস পরিশ্রম করে চলেছে , অথচ সেই মানুষটাই নিজে সুখী হতে পারেনি।
হয়তো এই প্রিয়ব্রত দের এই কষ্ট টা আমরা জানবো না কোনদিন।
হয়তো এই প্রিয়ব্রত দের এই কষ্টের খবর আমরা রাখবো না
কোনদিন।
হয়তো এই প্রিয়ব্রতদের এই কষ্টটা আমরা বুঝবো না কোনদিন।
আসলে এটাই বাস্তব -------
***************************************************ন নমস্কার 🙏
সবাই বাড়িতে থাকুন , ভালো থাকুন
আমার এই লেখাটি আপনার কেমন লেগেছে জানাবেন আপনার মূল্যবান মতামত এর আশায় রইলাম ।
**************************************************** ্য্্য্য্্্য্্য্য্্য্য্্য্য্্্য্্য্য্্্য্্য্য্্্য্্য্য্্য্য্্য্য্্্য্্য
Comments