আগেকার দিনে যাদের অবস্থা একটু ভালো ছিল। তারা এমন
ভাবে বাড়ি তৈরি করতেন তার মধ্য একটি বড় ঘর থাকতো।
যাকে বৈঠকখানা বলা হতো। অতিথি অভ্যাগত এলে তাকে
প্রথমে ওই বৈঠকখানার ঘরটিতে বসতে দেওয়া হতো।
তারপর গৃহকর্তা অতিথির সম্মুখে উপস্থিত হতেন।
গৃহকর্তার পিছনে পিছনে এক মুখ ঘোমটা টেনে , একহাতে খাবারভর্তি রেকাপ , আর এক হাতে জলর্ভতি গ্লাস নিয়ে আসতেন বাড়ির মহিলারা। অতিথিদের সামনে খাবারের রেকাপ ও জলের গ্লাস নামিয়ে দিয়ে ।
কোন কথা না বললেই নিরবে সেই স্থান
থেকে চলে আসতেন তারা । এটাই ছিল সেই সময়কার রেওয়াজ --রিতি।
আজ সে সব শুধুই স্মৃতি-----
আজকে অনেকেই বাড়ি বানান দেখার মত , ঝাঁ চকচকে শ্বেত পাথর বসানো , মোজাইক করা সব গগনচুম্বী বাড়ি।
কেউ বানান ভিলা তো , আবার কেউ বানান প্যালেস।
ভিলা হোক কিংবা প্যালেস সেই সব বাড়িতে কি বৈঠকখানা
আছে------?
সেই আগের দিনের মতো-----?
সেই বৈঠকখানার ছাট থেকে আসা সরু চেন ,আর সেই চেনের মাথায় বাঁধা গ্যাসবাতির ঝাড় লন্ঠন।
প্রতিদিনে সন্ধ্যায় সেই গ্যসবাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হতো।
আর সকালে সেটা নিভিয়ে দেওয়া হতো-----।
এই গ্যাসবাতির ঝাড় লন্ঠন সবার বাড়িতে থাকতে না।
সেই সময় যারা বৃত্তশালী বা জমিদার ছিলেন। কেবলমাত্র
তাহাদের বৈঠকখানায় এই গ্যাসবাতির ঝাড়লন্ঠন শোভাবর্ধন
করতো। আর যারা জমিদার ছিলেন না -------
তাদের বৈঠকখানায় জ্বোলতো ISI মার্ক এভারেডির লাল লন্ঠন যাকে আমরা এভারেডি হ্যারিকেন বলে চিনতাম।
বৈঠকখানার দেওয়ালে টাঙানো থাকতো তখনকার দিনের
বিখ্যাত পটিকার (চিএকার) দের আঁকা পটের ছবি।
কোনটায় আঁকা থাকতো রাধা-কৃষ্ণের বিভিন্ন লীলারছবি,
কোনটা রাম-রাবনের যুদ্ধ , সীতাহরন , সীতার বনবাস,
কুরুক্ষেত্রর যুদ্ধ ,এরকম রামায়ন ও মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে নানান সব আঁকা ছবি।
পেল্লাই বড় এক পেন্ডুলাম দেওয়াল ঘড়ি।
বৈঠকখানায় পাটা থাকতো একটি মস্তবড় কাঠের তক্তবোশ,
সন্ধ্যায় সেখানে হাজির হতেন সেই সময়কার মুখ্যা ,মোড়ল।
চলতো সব চাষ- আবাদের কথা ,
PNPC ( পরনিন্দা-পরচর্চা) চলতো,
কার বউয়ের মাথায় ঘোমটা নেই ,কার মেয়েটা আবার কার সাথে ফুস্টি-নস্টি করছে ---?
চলতো সেসব আলোচনা। চলতো সে সময়কার রাজনৈতিক আলোচনাও।
তারপর তক্তবশে রাখা এক বিরাট ঢাইস কাঠের বাক্স ,
যা তখনকার দিনের রেডিও ছিল। সেটা চালিয়ে দিয়ে পল্লী কথার আসর , কিংবা চাষীভাইদের বলছি , আবার কখনো
বুনো জমির বুনো ফসল , রেডিওর সে সময়কার অনুন্ঠান।
তারপর একসময় বায়ার কোম্পানির বিখ্যাত সেই রেডিওর বিঙাপন ওহে চাষীভাই মাজরা পোকা ফসলে হানা দিতে
পারেরে ,তাই বায়ারের মেটাসিট ৫০ দিয়ে ফসল রক্ষা করো ।
আর মাথার ঘাম পায়ে ফেলা
ধান রক্ষা করো---
আর বলো চাষী ভাইয়ের জয়রে , চাষী ভাইয়ের জয়।
এরপরেই শুরু হতো স্হানীয় সংবাদ------
আকাশবাণী কলকাতা স্হানীয় সংবাদ পড়ছি
বরুন মজুমদার--------
সেই মায়াবী জাদুকন্ঠের অধিকারী বরুন মজুমদারের
সু- মধুর কন্ঠের জাদুতে সবাই তখন একেবারে মহিত।
সে সব আজ শুধুই স্মৃতি-----------
আজ আমাদের গগনচুম্বী বড় বড় অট্টালিকা আছে , আছে
ভিলা , প্যালেস।
আছে কত বিনোদন--- টিভি , এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ,
আছে ফেসবুক, ইউটিউব , হোয়াটসঅ্যাপ , ইনস্টাগ্রাম,
টিউটার , টেলিগ্রাম, আছে টিকটক ,ভিগো , HELO আরো কত কি ------
নেই শুধু সেই বৈঠকখানা, গ্যাসবাতির ঝাড়লন্ঠন , পেল্লাই পেন্ডুলামের সেই দেওয়াল ঘড়ি , নেই সেই পটিকারের নিপুন,
তুলির আঁচড়ে আঁকা সেই পটের ছবি।
ঢাইস মার্কা কাঠের বক্সের রেডিও।
নেই সেই সুরেলা কন্ঠের বরুন মজুমদারের পাঠ করা খবর।
যা আজ বড় বেশি বেশি মিস করি------
যা আজ শুধুই স্মৃতি-----------।
****************************************************বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন------
আমার এই লেখাটি আপনার কেমন লেগেছে জানাবেন।
আপনার মূল্যবান মতামত এর আশায় রইলাম।
ইতি----সমীর✍️
****************************************************
নমস্কার 🙏
---------------------------------------------------------------------------------
Comments