জন্ম হয়েছিল তার এক অতি গরীব দিন আনে দিন খায় পরিপারে। বাবা লোকের জমিতে দিন মজুরের কাজ করে।
তাই ছোট থেকে ভালো খাওয়া, ভালো জামা-কাপড় পড়া, ভালো কোন সখ-আহ্লাদ,কোন কিছুই ভালো পাইনি সে।
তবে এতকিছু ভালো না পাওয়ার পরেও লেখা-পড়ায় ভালো ছিল সে।
কিন্তু গরিব বাবা তার পড়াশোনার খরচ চালাবে কি করে ?
তাই মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বিয়ে দিয়ে দিল তার।
মেয়েটি ভেবেছিলো বাপের বাড়ীতে তার যা কিছু না-পাওয়া গুলো হয়তো সে তার শ্বশুড় বাড়িতে পেয়ে যাবে।
কিন্তু বিধি বাম--------
বিয়ে হলো তার সেই দিন-আনে,দিন-খায় এরকম এক ছেলের সাথে।
শুরু হলো তার এক নতুন জীবন কন্যা থেকে বধু ,
কুমারী জীবন থেকে বিবাহিত জীবন ।
এরপর সময়ের নিয়মে তার সংসারে আলো করে এলো এক নতুন অতিথি ফুলের মতো এক ফুট-ফুটে মেয়ে তার কন্যা সন্তান।
জীবনে এই প্রথম না পাওয়ার ব্যথা-যন্ত্রণা সব ভুলিয়ে দিল
এক অনাবিল সুখ ও আনন্দ তাহলো মাতৃত্বের । কন্যা থেকে বধু , জায়া থেকে মাতা , পরিপূন্য হলো জীবনের একটি বৃত্ত।
এই ছোট্ট কন্যাকে নিয়ে ছোট্ট - ছোট্ট সব সনালী স্বপ্নের জাল বুনতো শুরু করলো সে।
কিন্তু নিয়তি ন্যঃ বাধ্যতে -------
এমন সময় তার স্বামীর শরীর খারাপ হলো । ডাক্তার বাবু তার স্বামীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন ভয়ের কিছু নেই তবে ------
রোগটি হলো ( সি, ও, পি , ডি ) তাই উনি অল্প পরিশ্রমে হাপিঁয়ে যাবেন ,ভারী প্ররিশ্রমের কোন কাজ করতে পারবেন না।
ডাক্তার বাবুর কথা শুনে প্রথমে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে , কি করবে সে এখন ? স্বামীর এই রোজকারের সামান্য টাকাতেই কোন রকমে টেনে-টানে চলতো সংসারটা----
কি হবে এখন, কি করবে এখন সে ?
সে ঠিক করলো এবার সংসারের হাল নিজেই ধরবে , তার ছোট্ট সন্তানের জন্য , তার অসুস্থ স্বামীর জন্য , তার সংসারে জন্য।
শুরু হলো জীবনের আর এক নতুন লড়াই -----
তাই সকালে--সন্ধ্যায় সে ছোট ছেলে- মেয়েদের টিউশন পড়াতে লাগলো । এর পাশাপাশি সে একটি কোম্পানির বিউটি প্রোডাক্ট ডোর টু ডোর বিক্রি করতে লাগলো।
রোজ ভোরে সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ীর সব গৃহ কর্ম
সেরে , ছোট ছেলে মেয়েদের টিউশন পড়িয়ে , রান্না করে
স্বামীকে সন্তান কে খায়িয়ে নিজে কোনরকমে মুখে কিছু দিয়ে
বেড়িয়ে পড়তো বাড়ি-বাড়ি বিউটি প্রডাক্ট বিক্রি করতে।
বাড়ি ফিরে আসতো সন্ধ্যার কিছু আগে , তার পর বাড়ীর সব কাজ সেরে সন্ধ্যায় টিউশন পড়াতে বসে যেত, টিউশন ছুটির পর রান্না করে স্বামী, সন্তান কে খায়িয়ে নিজে খেয়ে শুতে যেত রাতের বিছানায়, অনেক রাত অবধি তার চোখে ঘুম আসতো না । চোখ বন্ধ করলেই তার দুই চোখে আসতো এক অজানা সব ভয়ংকর সব স্বপ্ন। অনেক রাত অবধি এই দুঃস্বপ্ন দেখতে - দেখতে কখন যেন সে ঘুমিয়ে পড়তো ।
এমনি করে চলছিল তার সংসার , যদিও একে চলা বলে না।
এক শত ছিন্ন শাড়ীকে যতই সেলাই করা হউক না কেন সে যেমন আবার ছিঁড়ে যায় , ঠিক তেমনি তার সংসার টার অবস্থা । নুন আছে তো পান্তা নেই -------
তাই সে মনে মনে ভাবলো এই ভাবে আর কতদিন ?
তাই একদিন সে এক দর্জি দোকানদারের কাছে গিয়ে বলে
তার জীবনের বিত্যান্ত । তাই উনি যদি দর্জির কাজ শিখিয়ে দেন তাহলে তার বড় উপকার হবে।
বেঁচে যাবে তার স্বামী , সন্তান , তাদের সংসার।
তাই বলে বিনামূল্যে নয় , আপনার পারিশ্রমিক আপনাকে দেবো।
আপনি চিন্তা করছেন হয়তো আমার তো এই অবস্থা কি করে আপনাকে আমি পারিশ্রমিক দেবো ?
আমার এই কানের জোরা দুটি বিক্রি করে আপনার পারিশ্রমিক আমি আপনাকে দিয়ে দেবো।
দর্জি দোকানদার সব শুনে বলেন আপনি আগামীকাল থেকে আমাদের এখানে কাজ শিখতে আসুন , আর আপনাকে আমার পারিশ্রমিক কিছুই দিতে হবে না।
দর্জি দোকানদারের এই কথা শুনে মেয়েটি দুই চোখে জল এসে গেল, এই চোখের জল আনন্দের, এই জল কৃতজ্ঞতার ,এই জল শ্রদ্ধার।
এই প্রথম মেয়েটি দেখলো স্বার্থ্যপর এই পৃথিবীতে এখনো এরকম ভালো মানুষ ও আছেন , এই প্রথম মেয়েটি উপলবদ্ধি করলো এই সার্থ্যপর পৃথিবীতে এখনো সবাই স্বার্থ্যপর হয়ে যায়নি। অশ্রুসজল নয়নে , নমস্কার 🙏 করে
দর্জি দোকানদার কে মেয়েটি সেদিন বলে এসেছিল আপনার ভালো হোক।
শুরু হলো জীবনের আর এক নতুন লড়াই
এরপর পর দিন থেকে মেয়েটি দর্জির কাজ অতি মনযোগ দিয়ে শিখতে লাগলো , বলা বাহুল্য যে সে অতি অল্প সময়ে দর্জির কাজ রপ্ত করে ফেললো।
কানের জোরা দুটি বিক্রি করে সে কিনে ফেলে একটি সেলাই মেশিন , দিন - রাত এক করে সে দর্জি মেশিনের চাকা ঘুরিয়ে যেতে লাগলো , ঘুরতে লাগলো ভাগ্যের চাকা।
আজ সেই মেয়েটির হয়েছে একটি নিজস্ব দর্জির দোকান , " " অঙ্গশ্রী লেডিস টের্লাস " নামে যে দোকানটিকে আজ সবাই চেনে । দোকানটি পশ্চিমবঙ্গের , পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ,দাসপুর থানার , রাজনগর রাসতলা বাসস্টপে অবস্থিত।
ও এখনতো মেয়েটির নামটি বলা হয়নি , মেয়েটির নাম অনু , আজ তিনি সবার পরিচিত এক নামে অনুদি , সবার অনুদি।
আজ তার কাছে অনেক মেয়েরা আসে দর্জির কাজ শিখতে ,
আর তিনি হাসি মুখে , নিজে হাতে ধরে সবাইকে দর্জির কাজ শিখিয়ে চলেছে।
আজ ও সে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তার জীবনের লড়াই , তার বেঁচে থাকার লড়াই , তার স্বামী সন্তান কে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই , এ লড়াই তার সংসার কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লড়াই।
------------------------------------------------------------------------------ নমস্কার 🙏 সবাই ভালো থাকবেন
আর এই গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো জানাবেন। আপনাদের মূল্যবান মতামত এর আশায় রইলাম।
🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀
🔴 ২পর্ব 🔴
জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক মেয়ের কথা
প্রথম পর্ব এই পেজে লেখা হয়েছে ১৬ ফ্রেরুয়ারী ২০২০
আজ ২১ ,২ ২০২১ লিখছি ২য় পর্ব
ছোট্ট একটা দর্জির মেশিন চালিয়ে বড়ো করেছে তার পরিচয়
কিন্তু এখানেই থেমে থাকতে চায়না।
কারন তার মনের মধ্যে ছিল এক খিদে , আরো কিছু করে দেখানোর
খিদে।
তাছাড়া তার মনের মধ্যে ছিল অনেক দিনের এক সুপ্ত বাসনা
সে মেকআপ আর্টিস্ট হবে।
আর তার মনের সুপ্ত বাসনা কে সম্পূর্ণ রূপ দিতে কলকাতার
এক বিউটি পার্লারে শিখতে লাগলো , বিউটি পার্লারের কাজ।
মনে অদম্য ইচ্ছায় , নতুন কিছু করে দেখানোর তাগিদে
তাই অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই শিখে নিলো পার্লারের সমস্ত রকমের কাজ।
তারপর ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করে খুলে ফেললো নিজের একটা
মেয়েদের বিউটি পার্লার।
তার নাম শ্রী লেডিস পার্লার-------
যার নাম আজ সব মেয়েদের মুখে মুখে।
যে মেয়েটি ভালো করে সাজেনি কখনো, ভালোকরে সাজার
সৌভাগ্য হয়নি কখনো।
আজ সেই মেয়েটি প্রতিদিন হাসি মুখে তার নিপুন হাতে
সাজিয়ে চলেছে কত জনায়।
তার সদা হাস্য, আন্তরিকতা , শান্ত স্বভাব ,মিষ্টি- মধুর ব্যবহার,
নিপুন কর্ম দক্ষতায় আজ পার্লারের জগতে এক বিশাল
জায়গা করে নিয়েছে সে।
রেখেছে তার আরও এক নতুন পরিচয়।
আপনাদের সবার আশির্বাদে সামনে এগিয়ে চলুক তার সংগ্রামী জীবন।🙋
🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀🌀
Comments