সু-প্রিয় পাঠক --------
আমি সমীর, আর আপনারা পড়ছেন আমার ব্লগ
সমীর-ব্লগপোষ্ট--ডট-কম-----
আজও এই উন্নত বিজ্ঞানের যুগে অনেকেই এখনো মাদুলি শরীরে ধারন করেন।
তা তারা মাদুলি ধারন করতেই পারেন, সেটা তার সম্পুর্ন ব্যাক্তিগত ব্যাপার, যে যার নিজস্ব বিশ্বাস,
তাই এ নিয়ে আমি কাউকে আঘাত বা ছোট করতে চাই না।
আর আমি এই বিষয়ে কিছু বলতেও চাইনা----
যদিও প্রসঙ্গক্রমে আজকে আমার ব্লগে
লেখার বিষয় মাদুলি---------------
আমি একটি কোম্পানির সেলসের কাজ করি।
তাই আমাকে কর্ম সূত্রে প্রায় প্রতিদিন আজ এখানে তো কাল সেখানে এই ভাবে নানান জায়গায় যেতে হয়।
সে দিন আমি কর্ম সূত্রে আমাদের বাড়ি থেকে
প্রায় ৩০০ কিলো মাইল দূরে গেছিলাম।
জায়গাটি ছিল অত্যন্ত পাড়া গাঁ
তবে এখানে সপ্তাহের দুদিন হাট বসে------
রবিবার ও বুধবার,
তবে বলা বাহুল্য হাট টি বেশ বড়ো, লোকজনে জমাটিও বটে------
যেহেতু পাড়া গাঁ তাই এখানের
প্রায় মানুষ চাষী তাই এই হাটে মানুষ জন এসেছে তাদের নিজেদের জমিতে ফলানো ফসল বেচতে
আবার কেউ এসেছে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস
কেনাকাটা করতে।
এই বাজারেই এক বড় দোকানদারের সাথে আমার
কাজ।
আমি সেই দোকানদারের সাথে আমার দরকারী
কাজ কর্ম মিটিয়ে।
বাড়ি ফিরে আসার সময় ভাবলাম এই জায়গায় প্রথম এলাম।
তাই হাটটা একবার ঘুরে দেখি-------
এই মনে করে আমি হাটটা ঘুরে দেখতে লাগলাম।
এদিক- ওদিক ঘুরতে ঘুরতে দেখি, হাটের এক ধারে বেশকিছু মানুষ জরো হয়েছে।
এবং তারা সবাই খুব উৎসাহের সাথে কিছু একটা
দেখছে।
আমি কৌতুহল বশ্যত সেই স্হানে একটু এগিয়ে গেলাম।
এবং লোকদের ভিড় ঢেলে উঁকি দিয়ে দেখতে লাগলাম।
কি হচ্ছে ওখানে------?
মনুষ জনের কৌতুহল এত কি নিয়ে --------?
গিয়ে দেখলাম একটি লোক মাদুলি বিক্রি করছে--
হরেক রকম মাদুলি।
কাছের মানুষ দূরে চলে গেছে------?
কাছে আনতে চান---------?
মাদুলি পাবেন--------
সংসারে আশান্তি---------?
শান্তি ফেরাতে মাদুলি পাবেন --------
সন্তানের পড়াশোনায় মন বসে না-------?
মাদুলি আছে পাবেন---------
সময় অতন্ত্য খারাপ যাচ্ছে -----
তই হওয়া কাজ হতে গিয়ে বারে বারে হচ্ছে না---?
কিংবা পরম বন্ধ ু এখন চরম শত্রু--------?
মাদুলি আছে পাবেন-----
মনের মানুষ কে বসে আনতে চান, পারছেন না ---?
মাদুলি আছে পাবেন-----
গুপ্ত রোগ-------?
দিনে দিনে শুকিয়ে যাচ্ছন-----?
অনেক ডাক্তার - বৈদ্যি দেখিয়ে কোন প্রকার ফল পাচ্ছেন না----?
এই মাদুলি ধারন করুন, ফল নিশ্চয়ই পাবেন-----
এক কোথায় বলতে গেলে সব সমস্যার মাদুলি আছে, পেয়ে যাবেন ------
দাম অতি সামান্য মাএ এগারো টাকা, এগারো টাকা, এগারো টাকা -------
যাদের সত্যিকারের প্রয়োজন আছে।
এইদিকে হাতটা বাড়াবেন
তবে এই মাদুলি বেশি নেই ----
কয়েক পিস আছে মাএ, ফুরিয়ে গেলে আর পাবেন না------
মাদুলি আলার এই কথা শুনে বেশ কয়কটি হাত বাড়িয়ে দিল, মাদুলি নেওয়ার জন্য -------
দেখি মানুষের হাত পেতে মাদুলি নেওয়ার শেষ নেই,
আর মাদুলি আলার, মাদুলির ও শেষ নেই।
এ যেন মাদুলি নেওয়ায় জন্য একেবারে যাকে বলে ধুমপড়ে গেল---------
হঠাৎ মাদুলি আলার সাথে আমার চোখাচোখি হতেই।
মাদুলি আলা আমাকে বললো আপনি দাদা
একট দয়া করে দাঁড়িয়ে যাবেন-----
হ্যঁ, আপনাকে বলছি
আমি মনে মনে বেশ আবাক হয়ে ভাবছি মাদুলি আলা, হঠাৎ আমাকে দাঁড়িয়ে যেতে বলছে
কেন-----?
আমি তো মাদুলি নেওয়ার জন্য হাত বারাই নি
তাহলে -----?
হঠাৎ কেন আমাকে দাঁড়িয়ে যেতে বলছে ----?
এই ভেবে, আমি ভেবেই চলছি-------
আর ভেবেই চলেছি, ততক্ষণে মাদুলি যাদের নেওয়ার প্রয়োজোন ছিল, তরা সবাই কখন যে মাদুলি নিয়ে চলে গেছে-----
সেদিকে আমার হুস ছিলো না।
কারন, তখন আমি ভেবে যাচ্ছিলাম, আর শুধুই ভেবে যাচ্ছিলাম------
হয়তো তখন আমি ভেবেই চলতাম, যদি না মাদুলি আলা ----
আমাকে প্রশ্ন করতো, কিরে কেমন আছিস ----?
তা কি করছিস এখন -----?
আমাকে উদ্দেশ্য করে মাদুলি আলা এ কথাগুলো বলছে। আর আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে --
হঠাৎ মাদুলি আলা আমাকে প্রশ্ন করে বসে---
কিরে আমাকে চিনতে পারছিস না------?
আমি আমার মাথা নাঁড়িয়ে বলি না, না ----তো---
মাদুলি আলা বলে, আরে আমি ফটিক, আরে ফটিক চাঁদ ------
এবার আমার চিন্তার ঘোর কাটিয়ে বলে উঠি,
ফটিকচাঁদ, মানে ফটিক, মানে তুই ফটকে ---?
ফটিক বলে আরে বাবা হ্যাঁরে, হ্যাঁ ---------
আমি ফটিক --------মানে ফটকে-----
এই বলে একপ্রকার ফটিক আমাকে জোর করে
হাটের এক কোনে একটি মস্ত বড়ো বট গাছের তলায় নিয়ে গেল---
স্হানটি তখন প্রায় নির্জ্জন ছিলো, বট গাছটির তলাটিও বেশ বাধাঁনো, পাকা ঢালাই করা।
ইচ্ছা না থাকলেও ফটকের এক প্রকার অনুরোধে
ফটকের কথামতো, ওকে অনুসরন করে আমি পর
পিছন পিছন বট গাছটির তলায় গিয়ে বসলাম।
ছোট বেলা থেকেই আমি বেশ গোঁঁয়ারতুমি ,
ওই আনারি টাইপের ------
কোন দিন আমি ভূত, পেত্নী, বক্ষ্রদৈত্য এসবে যেমন ভয় পাইনা, তেমনি এসবে বিশ্বাস করিনি।
এমন কি ঠাকুর - দেবতার প্রতিও শ্রদ্ধা থাকলেও
তেমন একটা বিশ্বাস নেই বলেও চলে।
তবে ভগবানের প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা যেমন আছে, ঠিক তেমনি ভগবানের প্রতি চিরকাল আমার বিশ্বাস ছিল এবং সেই বিশ্বাস
এখনো আছে, আর ভগবানের প্রতি বিশ্বাস আমার চিরকাল থাকবে---🙏
আমি কোন দিন মাদুলি - তাবিজ তো দূরের কথা
কোমরে লালসুতোর ঘুমসি পরিনি ।
যাক সেই কথা---------
আজ যখন মাদুলি বিক্রি করে এমন একজন কে
কাছে পেয়েছি, তখন ওর নিজের মুখ থেকেই শুনে নিই মাদুলি -তে কাজ হয়।কিনা-----?
ও ভালো কথা, তার আগে আসুন ফটিকের সাথে
আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই ----
ফটিক আর আমার বাড়ি এক গ্রামে, এক পাড়ায়
একসাথে খেলাধুলা, এক সাথে লেখাপোড়া, একসাথে একই স্কুলে ক্লাস টেন অবধি আমরা একসাথে লেখাপোড়া করেছি----।
সে বছর সবে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে, রেজাল্ট তখনো বের হয়নি।
এমন সময় একদিন ফটিকের বাবা হৃদরোগে মারাগালো।
ফটিকদের সেরকম তেমন বিষয়- সম্পতি ছিলো না।
ওর বাবা লোকেদের ক্ষেতে জন-মুজুরীর
কাজ করে অনেক কষ্টে কোন রকমে ওদের সংসারটা চালাতো।
তাই ফটিকের বাবার মৃত্যর পর ওর মা ফটিক কে নিয়ে ওর মামা বাড়ি লালগড় চলে যায়।
সে প্রায় ১০-১২বছর আগের কথা।
তারপর এতবছর পরে হঠাৎ দেখা এই হাটে।
তো দেখা যখন হলো তখন আসল কখাটা
জিজ্ঞেস করি।
আচ্ছা ফটিক আসল কথাটা বলতেো-----
এই এতক্ষণ ধরে তুই, এতগুলো লোককে কবচ বিক্রি করলি।
তা তোর এই মাদুলি তে, লোকেদের কাজ হয়----?
আমার এই প্রশ্ন শুনে,
ফটিক হোহো করে হেসে উঠে।
তারপর এক সময় সে তার হাসি থামিয়ে বলে
আরে মাদুলি তে যদি কাজ হতো ------
তাহলে আর এতদিন ধরে আমাকে মাদুলি বিক্রি করতে হতো না।
আমি সবিস্ময়ে ফটিকে প্রশ্ন করি, তার মানে----?
ফটিক একটু গম্ভীর হয়ে বলে আরে এতোদিনে এদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত, নয়তো এই মাদুলি পরে আমার নিজের ভাগ্য ফিরে যেত, আমাকে আর মাদুলি বেচতে হতো না------
আমি আবার বিস্ময়ে ফটিক কে প্রশ্ন করি
তাহলে এতো রীতিমতো লোক ঠোকানো-----?
আমার প্রশ্নের উত্তরে ফটিক বলে -----
আসলে ঠিক লোক ঠোকানো নয়, এই মাদুলি ধারন করলে লোকে মনে একটা বেশ জোর আাসে, সেটা বিশ্বাসের।
আর এই বিশ্বাসের জোরে কারে- কারো একটু- আধটু কখনো - কখনো কাজ হলেও হতে পারে।
আর এই স্রেফ বিশ্বাসের জেরেই আজ লোকেরা
মাদুলি কিনে, মাদুলি ধারন করে------।
এমন সময় আমার মোবাইল ফোনে একটা ফোন আসে।
আমি ফোনের ও পান্তের প্রশ্ন কর্তার সব উত্তর দিয়ে,
ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি, তখন প্রায়
পৌনে তিনটা বেজে গেছে----
আমি সঙ্গে সঙ্গে বলেউঠি, এই ফটিক আমাকে ফিরতে হবে।
কোথায় - কোথায় অনেক দেরি হয়ে গেল, আজ উঠি'রে-----
অন্য একদিন আবার গল্প করা যাবে-----
ফটিক বলে তোর ফোন নাম্বরটা দিয়ে যা আমি তোকে ফোন করবো বন্ধু।
আমি আমার প্যান্টের পকেট খেকে আমার একটি
কার্ড ওর হাতে ধরি দিয়ে বললাম,
এই নে, আসছি রে, ফোনে কথা হবে-------
আমি দ্রুত বাস ধরবার জন্য, বাসস্যান্টের দিকে রওনা দিলাম।
বাসে বসে বাড়ি আসতে- আসতে শধু ফটিকের
এই কথাগুলো আমার কানের মধ্যে বাজতে থাকলো-----
মাদুলি তে কাজ হয়না রে-----
তবে বিশ্বসের জোরে মনে একটু সাহস আসে, মনে একটু সাহসের জোর আসে- আর এই বিশ্বসের
জোরে কারো কারো মাদুলি তে কাজ হলেও হতে পারে ------
করো কা রো কা জ হ লে ও হ তে পা রে------
---------------------------------------------------;------------
সু-প্রিয় পাঠক, আমার ব্লগে এই মাদুলি লেখাটি
আপনাদের কেমন লেগেছে আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন।
---------------------------------------------------------------
ভালো থাকুন, সুস্হ থাকুন
নমস্কার 🙏
ইতি-------সমীর✍️
--------------------------------------------------------------
বন্ধুরা আমার এই ব্লগে আরো অন্য লেখাগুলো। আপনারা পড়তে চাইলে লক অন করুন
👉https.allsamir.blogpost.com
------------------------------------------------------------------
Comments