Skip to main content

ভিগো বউদি

আজকের গল্প -----ভিগো বউদি
রচনা--------সমীর✍️
--------------------------------------------------------------------------------
সপ্তাহের আর ৬দিনের মতো , সেদিনও ‌সকালে ঠিক সময়ে
ঘুম থেকে উঠেছিলাম ,‌  বাড়িতে চা খেয়ে ‌, বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে , বাজারে গিয়েছিলাম ।
বাজারে গিয়ে প্রথম টের পেলাম , সপ্তাহের অন্যান্য ‌দিনের
তুলনায় আজকের দিনটা ‌একটু অন্যরকম ।
প্রথম টের পেলাম , প্রতিদিনের মত ‌ বাজারে যার কাছে ‌
মাছ কিনি , তার কাছে মাছ কিনতে গিয়ে।
আমাকে দেখেই সে আনন্দে গদগদ হয়ে ‌বলে‌ ----
দাদা  , আজকে ইলিশ মাছ নিয়ে যান বাড়িতে ‌----
বউদিকে আজকে ইলিশ মাছ ‌ খাওয়ান।
আমি বললাম আরে না-----রে ভাই-----
 আমি‌ তো  ছোট খাটো  ‌কম্পানীতে‌ , সামান্য ‌
বেতনে‌ চাকুরী করি । এই মাঙ্গার বাজারে ইলিশ কেনার 
মত , আমার এত পয়সা ‌নেই ভাই -----
মাছ বিক্রেতা  ভাইটি  বলে , আরে  ছাড়ুন তো ‌ ‌দাদা
এসব কথা , আজ আপনেকে কেনা দামেই দিয়ে দেবো।
কেন আজ হঠাৎ কেনা দামেই মাছ দিয়ে দেব--, পচা না কি ?
আরে দাদা না -না , মাছ একেবারে টাটকা ।
আসলে আজকে বউদির জন্য দিলাম।‌ বউদি যা করেছে ,
এক ভিডিওয়ে একেবারে ভাইরাল , বউদিকে বলবেন ,
আমি ও বউদির ফ্যান----।
মাছ বিক্রেতা ভাইটির কথা শুনে , আমি বললাম আরে
ভাই‌ , এসব তুমি কি বলছো বলতো --?
এই ভিডিও  , ভাইরাল , আরে এসব কথা ‌তো, আমি কিছুই
বুজতে পারছিনা।
মাছ বিক্রেতা  মাছ ওজন ‌করা‌ থামিয়ে  দিয়ে ‌, আমার দিকে
তাকিয়ে ‌বলে সেকি দাদা ‌, বউদি এত বড় একটা কাজ করলো , রাতা‌ রাতি‌ একেবারে সেলিব্রেটি হয়ে গেল , আর 
আপনি বলছেন কিছুই জানেন না , ইয়ার্কি
 করছেন‌ দাদা-----?

আমি‌ আর কথা না বাড়িয়ে , তার মাছের দামটা‌ মিটিয়ে
দিয়ে , তাড়াতাড়ি চলে আসলাম সেখান থেকে।
সেদিন আর বাজারে কিছুই কিনলাম না।
তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
রাস্তায় দেখা হয়ে গেল রথীন দার‌ সাথে ‌-----
রথীন দা আমাদের ‌পাশের পাড়াতেই থাকেন , সরকারী 
অফিসের বড় পদে কর্মরত , অত্যন্ত ভালো ‌মানুষ , অত্যন্ত
সজ্জন ব্যক্তি , আমেকে‌ খুব স্নেহ করেন , একেবারে নিজের
ছোট ভাইয়ের মতোই‌ আমাকে ভালো বাসেন।
দেখা হতেই রথীনদা আমাকে বলেন , কি ভাই বাজার হয়ে
গেল ? 
মৃদু হেসে আমি উত্তর দিলাম হ্যাঁ দাদা ---
এর পর উনি আমাকে  বললেন , কিছু যদি মনে না করো
ভাই , তাহলে একটা কথা তোমাকে আমার জিজ্ঞাসার
‌ছিলো , কিন্তু কথাটা আমার বলা ঠিক হবে কিনা ‌ভাবছি ।
দাদা এত কিন্তুর কি আছে--, বলুন না কি বলবেন--?
রথীনদা  বললেন ,‌  না মানে ,বউমা যে এসব করছে , এগুলো ভালো নয় জানো , তাছাড়া তোমার ও তো একটা সন্মান আছে , তাই বলছিলাম এসব না করাই ভালো।
তাছাড়া এগুলো ভালোও দেখায় না ,‌ অন্য‌ কেউ হলে
তাকে অবশ্য আমার বলার কিছু ছিলোনা।
আসলে তোমাকে নিজের ভাই এর মত ভাবি তাই 
কথাগুলো তোমাকে বলে ফেললাম ।
 তুমি কিছু মনে করো না ভাই---।
রথীন দা কে আশ্বস্ত করে বললাম , না-না দাদা আমি 
কিছু ‌মনে করি নি -----
কিন্তু দাদা আপনি কোন  কথা বলেছেন ?
আমি বুঝতে পারলাম না ----
রথীনদা বললেন ওই ভিডিওটার কথা বলছিলাম।
আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন‌ করে‌ উঠলো।
মাছ বাজারে ওই মাছ বিক্রেতা বললো , এখানে
আবার রথীনদাও বলেন -----
আসলে সত্যি কথা বলতে ‌কি , আমি‌ ভিডিওর ব্যাপারে
কিছুই জানিনা। আপনার মতো মাছ বাজারে , ওই মাছ
বিক্রেতা ও আমাকে ওই ভিডিও- টিডিওর কথা কি সব
 যে বললো আমি বুঝতে পারলাম না।
রথীনদা তার জামার ‌পোকেট থেকে ফোনটি বের করে ,


ফোনের সুইচ ওন করে তার ফোনটি চালু করে , আমার
হাতে ধরিয়ে দিলেন ।
আমি ফোনটার দিকে তাকিয়েই ,‌ এ সব আমি কি দেখেছি,
আমার বউ , ছিঃছিঃ ---, লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।
আমি কোন‌ ক্রমে রথীনদার ‌ফোন‌টা ‌তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে।
তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
বাড়িতে আসতেই বাজারের ব্যাগটা আমার হাত থেকে
নিয়ে , বাজারে ‌‌ব্যাগের ভিতর একবার  নজর‌ করেই ,
ইংলিশ মাছটা দেখতে পেয়ে আমার বউ আনন্দে একে-বারে
নাচটে লাগলো ।
তার নাচা‌ থামিয়ে দিয়ে বললাম , তুমি ভিডিও করো----?
সে তার নাচ থামিয়ে দিয়ে বলে  হ্যাঁ কেন----?
আমি বললাম ছিঃছিঃ লজ্জায় আমার লোকের কাছে
মুখ দেখানো দায় ।
আমার বউ একেবারে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বলে,
কেন ভিগো ভিডিও করা খারাপ ?
তাহলে এত জন ভিডিও করছে ,   তারা সব খারাপ ‌‌?
আমি বললাম খারাপ ভালো আমি জানি না । তবে
এরপর থেকে তুমি আর এই ভিগো নিকি যেন ? তা‌ আর
করবেনা।
আমার কথার প্রতি উত্তরে সে বলে , কেন করবোনা শুনি
তোমার কথায় ? তুমি জানো এটা একটা শিল্পকলা ,ওটা 
একটা------
থামো-- ---, এটা শিল্পকলা ---?
ভিগো করে আর যাই হোক , কোন দিন শিল্পী হোওয়া যায় না।
শিল্পী হতে গেলে ----------
কাঁসার থালা মাটিতে পড়ে গেলে , যেমন ঝন-ঝন করে উঠে
আমার বউ সেরকম ঝন-ঝন করে বেজে উঠে বললো।
শিল্পী না হোক ,  এই ভিগো করে কত টাকা ‌পাওয়া যায়
 তুমি তা জানো----?
তাই বলে টাকার জন্য এই অসভ্য সব পোশাক পরে, এরকম সব অশ্লীল নাচ ---
আমার বউ তার কোমরে কাপড়টা গুঁজে বলে , কি বললে তুমি অশ্লীল , আর‌ একবার বলো----?
যখন গাঁটের টাকা দিয়ে সিনেমা দেখতে যাও ------, সেখানে যখন এরকম এই সব পোষাক পড়ে অভিনয় করে, 
সেই সব দেখো , তখন একবারো মনে হয়না ‌, সেগুলোও
অশ্লীল---, সে সব দেখা উচিত নয়----?
কিন্তু তাই বলে----
আমার কথা শেষের আগেই , আমার বউ আবার বলতে
শুরু করে , করো তো ওই হরিপদ কেরানির মতো একটা
চাকরি , তাও আবার বেসরকারী------
আর আমি শুধু একটি মাএ ভিগো‌ ভিডিও করেছি , আর প্রথম ‌ভিডিওই একেবারে ভাইরাল  , কত লাইক পেয়েছে জানো--?
এরকম আর কয়েকটা  ভিডিও ইউটিউবে ‌আপলোট করলেই  , গুগল এডসেন্স , মনিটাইজেশন ওন , ইউটিউব 
সিলভার বাটন , আর ‌মাসের শেষে ‌মোটা টাকা ।
আমি বললাম , কিন্তু  তাই‌ বলে -----?
শুনো  , আজ তোমাকে একটা কথা আমি খুব ‌পষ্ট‌ করে
জানিয়ে দিতে চাই যে------
আমি ভিগো ‌ভিডিও করছি  , করবো -------
আর তা ছাড়া আমি নাবালক নয় , আমার ‌যথেষ্ট বয়স হয়েছে  , তাছাড়া আরো একটা ব্যাপার হলো-------
আমি একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক , কাজেই আমি
কি পোশাক পড়বো ,‌ আমি কি ভাবে নাচবো সে অধিকার
 বা স্বাধীনতা আমার আছে । 
আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এই ঝগড়া হয়তো‌ আরো
 অনেকক্ষণ ধরে ‌চলতো ----------
কিন্তু ‌তা ইতি পড়লো তার কারন‌ , এমন সময় আমাদের
পাড়ার কোয়কজন ছেলে আমাদের বাড়ীর সামনে এসে
হাঁক দিতে ‌শুরু করেছে ‌  ,‌বউদি - বউদি বাড়িতে আছেন
নাকি  -----? 
কে এই বলে   , আমার স্ত্রী আমাদের বাড়ির দরজা
খুলে   দিয়ে তাদের ভিতরে আসতে বললো।
তারা বাড়ির ভিতরে ঢুকেই আমাকে দেখতে পেয়ে বলে---        এইতো দাদাও আছেন দেখছি , ভালোই হলো আপনি ও
আছেন‌। আসলে দাদা এই রবিবার‌  আমরা পাড়ার ছেলেরা  ঠিক করেছি যে ‌বউদি‌কে সংবর্ধনা দেবো । 
আমি ছেলেদের বললাম ‌সংবর্ধনা‌ কেন ---?
আমার কথা শুনে ছেলেরা ‌বলে ।
এটা কেমন কথা হলো ‌দাদা , আরে বউদি‌ আমাদের পাড়ার সবার গর্ব । বউদি যা করেছেন এক ভিডিওতেই ভাইরাল। ‌কাজেই সংবর্ধনা না দিলে ‌চলে , আপনিই বলুন ---?
আচ্ছা তাহলে আজকে আমরা আসছি , এই কথাই হলো , দাদা আপনি ও আসছেন‌ কিন্তু , না বললে শুনেছি না কিন্তু --
এই বলে ছেলেরা চলে গেল-----
আমি অনেকক্ষণ ওদের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
--------------------------------------------------------------------------------                                নমস্কার 🙏
ভালো থাকবেন সবাই ,আমার এই লেখাটি আপনাদের 
কেমন লাগলো জানাবেন , আপনাদের মূল্যবান মতামত এর আশায় রইলাম।
----------------------------------------------------------------------------------
                    াা্াাাা্াাা্াাাা্াাাা্াাাা্াাা্াাাাা্াাাা্াাা্াাা


















  







       ‌ ‌
 


Comments

Unknown said…
শেষ মেশ কি হল? দাদা কি ভিডিও করতে মত দিল?
Unknown said…
ধন্যবাদ জানাই আমাকে উদ্দেশ্য করে লেখার জন্য যদিও বা এতে আমার বাস্তব জীবনের কোন মিল নেই তবুও গল্পটি খুব সুন্দর হয়েছে এগিয়ে যাবে। এই আশা করছি, আমি গর্বিত।
কাউ‌কে আঘত‌করা‌‌ বা ছোট‌করার
জন্য এই লেখাটি ‌‌‌‌‌‌আমি‌‌ লেখিনি ,
এটা বর্তমান সময়ে ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌যা‌ ঘটছে তার
ছবি এই লেখাটির‌‌ মধ্যে তুলে ‌‌‌‌‌‌‌ধরতে
চেয়েছি মাএ ।
তবুও এই লেখাটি তে‌ কেউ ব্য্যথা
পেলে সেটা অনিচ্ছাকৃত জানবেন।
এবং তার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।

Samirblogpost.com

" জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক মেয়ের কথা "

জন্ম হয়েছিল তার এক অতি গরীব দিন আনে দিন খায় পরিপারে। বাবা লোকের জমিতে দিন মজুরের কাজ করে। তাই ছোট থেকে ভালো খাওয়া, ভালো জামা-কাপড় পড়া, ভালো কোন সখ-আহ্লাদ,কোন কিছুই ভালো পাইনি সে। তবে এতকিছু ভালো না পাওয়ার পরেও লেখা-পড়ায় ভালো ছিল সে।  কিন্তু গরিব বাবা তার পড়াশোনার খরচ চালাবে কি করে ? তাই মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বিয়ে দিয়ে দিল তার। মেয়েটি ভেবেছিলো বাপের বাড়ীতে তার যা কিছু না-পাওয়া গুলো হয়তো সে তার শ্বশুড় বাড়িতে পেয়ে যাবে। কিন্তু বিধি বাম-------- বিয়ে হলো তার সেই দিন-আনে,দিন-খায় এরকম এক ছেলের সাথে। শুরু হলো তার এক নতুন জীবন কন্যা থেকে বধু , কুমারী জীবন থেকে বিবাহিত‌ জীবন । এরপর সময়ের নিয়মে তার সংসারে আলো‌ করে এলো এক নতুন অতিথি ফুলের মতো এক ফুট-ফুটে মেয়ে তার কন্যা সন্তান। জীবনে এই প্রথম না পাওয়ার  ব্যথা-যন্ত্রণা সব ভুলিয়ে দিল এক অনাবিল সুখ ও আনন্দ তাহলো মাতৃত্বের । কন্যা থেকে বধু  , জায়া থেকে মাতা , পরিপূন্য হলো জীবনের একটি বৃত্ত। এই ছোট্ট কন্যাকে নিয়ে ‌‌‌‌‌‌‌ছোট্ট - ছোট্ট সব সনালী স্বপ্নের জাল বুনতো শুরু করলো সে। কিন্তু নিয়তি ন্যঃ বাধ্যতে ------- এমন ...

স্মল বিজনেস আইডিয়া পর্ব-১

স্মল বিজনেস আইডিয়া পর্ব-১ মাএ ৩০০০.০০(তিন) হাজার 💰 টাকা পুঁজি নিয়ে ঝুঁকি বিহীন লাভজনক একটি ব্যবসা। নিজের মনে আত্ম বিশ্বাস আর প্ররিশ্রম করার মানসিকতা থাকলে। মাএ তিন হাজার 💰 টাকা পুঁজি নিয়ে আপনি শুরু করতে পারেন। ঝুঁকি বিহীন লাভজনক একটি নিজের স্বাধীন ব্যবসা। *ব্যবসাটি হলো ঔষধ দেওয়া খামের ব্যবসা* আপনারা যখন মেডিক্যাল সপ বা ঔষধের দোকানে  ওষুধ কেনেন তখন দেখে থাকবেন ঔষধ দোকানদার আপনাকে( ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল) ওষুধ একটি সাদা কাগজের ঠোঙ্গা বা খামে ভরে সেই ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল ওষুধ আপনার হাতে ধরিয়ে দেন। আজকের বিজনেস আইডিয়াটি হলো এই ওষুধ দেওয়া খামের ব্যবসা। এই ওষুধ দেওয়া খামের ব্যবসাটি আপনি দুই ভাবে করতে পারেন। ১। এই ওষুধ দেওয়া খাম পাইকারি বাজার থেকে কিনে। ২। এই ওষুধ দেওয়া খাম নিজে বাড়িতে বসে তৈরী করে। যদি আপনি পাইকারি বাজার থেকে এই খাম কিনে ব্যবসা করতে করতে👇  তাহলে কলকাতা বড়বাজার অঞ্চলে ওল্ড চিনে বাজারে এই খাম গুলি পাইকারি দামে কিনতে পারবেন। ওল্ড চিনেবাজার হলো কলকাতা বড়বাজার অঞ্চলে ট্রিপল পট্টির ঠিক উল্টো দিকে। কলকাতা বড়বাজারে ট্রিপলপট্টি গিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করলে আপনাকে ...